1446H Week-34

Friday, 28 February 2025

QURAN

Ya-Sin | Ya Sin | Verse 30-36

Surah Ya-Sin

Ayahs

83

Revelation Place

Mecca

Name

The Surah takes its name from the two letters of the alphabet with which it begins.  

Period of Revelation

A study of the style shows that it was either sent down during the last stage of the middle Makkan period, or it is one of those Surahs, which were sent down during the last stage of the Holy Prophet's stay at Makkah. 

36:30

يَـٰحَسْرَةً عَلَى ٱلْعِبَادِ ۚ مَا يَأْتِيهِم مِّن رَّسُولٍ إِلَّا كَانُوا۟ بِهِۦ يَسْتَهْزِءُونَ ٣٠

How regretful for the servants. There did not come to them any messenger except that they used to ridicule him.

— Saheeh International

পরিতাপ বান্দাদের জন্য! তাদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে তখনই তারা তাকে ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছে।

— Sheikh Mujibur Rahman


36:31

أَلَمْ يَرَوْا۟ كَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّنَ ٱلْقُرُونِ أَنَّهُمْ إِلَيْهِمْ لَا يَرْجِعُونَ ٣١

Have they not considered how many generations We destroyed before them - that they to them[1] will not return?

— Saheeh International

[1]i.e., to those living presently in the world.

তারা কি লক্ষ্য করেনা যে, তাদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করেছি যারা তাদের মধ্যে ফিরে আসবেনা?

— Sheikh Mujibur Rahman


36:32

وَإِن كُلٌّۭ لَّمَّا جَمِيعٌۭ لَّدَيْنَا مُحْضَرُونَ ٣٢

And indeed, all of them will yet be brought present before Us.

— Saheeh International

এবং অবশ্যই তাদের সকলকে একত্রে আমার নিকট উপস্থিত করা হবে।

— Sheikh Mujibur Rahman


36:33

وَءَايَةٌۭ لَّهُمُ ٱلْأَرْضُ ٱلْمَيْتَةُ أَحْيَيْنَـٰهَا وَأَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّۭا فَمِنْهُ يَأْكُلُونَ ٣٣

And a sign for them is the dead earth. We have brought it to life and brought forth from it grain, and from it they eat.

— Saheeh International

তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত ধরিত্রী, যাকে আমি সঞ্জীবিত করি এবং যা হতে উৎপন্ন করি শস্য, যা তারা আহার করে।

— Sheikh Mujibur Rahman


36:34

وَجَعَلْنَا فِيهَا جَنَّـٰتٍۢ مِّن نَّخِيلٍۢ وَأَعْنَـٰبٍۢ وَفَجَّرْنَا فِيهَا مِنَ ٱلْعُيُونِ ٣٤

And We placed therein gardens of palm trees and grapevines and caused to burst forth therefrom some springs -

— Saheeh International

তাতে আমি সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের উদ্যান এবং উৎসারিত করি প্রস্রবণ –

— Sheikh Mujibur Rahman


36:35

لِيَأْكُلُوا۟ مِن ثَمَرِهِۦ وَمَا عَمِلَتْهُ أَيْدِيهِمْ ۖ أَفَلَا يَشْكُرُونَ ٣٥

That they may eat of His fruit.[1] And their hands have not produced it,[2] so will they not be grateful?

— Saheeh International

[1]An alternative meaning is "And [eat from] what their hands have produced [i.e., planted and harvested]."  Both are grammatically correct.

[2]i.e., that which Allāh has produced for them.

যাতে তারা আহার করতে পারে এর ফলমূল হতে, অথচ তাদের হাত ওটা সৃষ্টি করেনি। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেনা?

— Sheikh Mujibur Rahman


36:36

سُبْحَـٰنَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْأَزْوَٰجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنۢبِتُ ٱلْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ ٣٦

Exalted is He who created all pairs[1] - from what the earth grows and from themselves and from that which they do not know.

— Saheeh International

[1]Or "all species."

পবিত্র মহান তিনি, যিনি উদ্ভিদ, মানুষ এবং তারা যাদেরকে জানেনা তাদের প্রত্যেককে সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়।

— Sheikh Mujibur Rahman

Tafseer Ibn Kathir (Abridged)

Woe to the Disbelievers!

`Ali bin Abi Talhah reported that Ibn `Abbas commented on the Ayah:

يحَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ

(Alas for mankind!), this means, woe to mankind! Qatadah said:

يحَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ

(Alas for mankind!) means, "Alas for mankind, who have neglected the command of Allah." The meaning is that they will feel regret and sorrow on the Day of Resurrection. When they see the punishment with their own eyes; they will regret how they disbelieved the Messengers of Allah and went against the commands of Allah, for they used to disbelieve in them in this world.

مَا يَأْتِيهِمْ مِّن رَّسُولٍ إِلاَّ كَانُواْ بِهِ يَسْتَهْزِءُونَ

(There never came a Messenger to them but they used to mock at him.) means, they disbelieved him and made fun of him, and rejected the message of truth with which he had been sent.

The Refutation of the Belief in the Transmigration of Souls

Then Allah says:

أَلَمْ يَرَوْاْ كَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنَ الْقُرُونِ أَنَّهُمْ إِلَيْهِمْ لاَ يَرْجِعُونَ

(Do they not see how many of the generations We have destroyed before them Verily, they will not return to them.) meaning, `do you not learn a lesson from those whom Allah destroyed before you of those who disbelieved in the Messengers They came to this world only once, and will not return to it.' It is not as many of those ignorant and immoral people claim that

إِنْ هِىَ إِلاَّ حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا

("There is nothing but our life of this world! We die and we live!") (23:37). This was the belief in the cycle of reincarnation; in their ignorance they believed that they would come back to this world as they had been before. But Allah refuted their false belief and said:

أَلَمْ يَرَوْاْ كَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنَ الْقُرُونِ أَنَّهُمْ إِلَيْهِمْ لاَ يَرْجِعُونَ

(Do they not see how many of the generations We have destroyed before them Verily, they will not return to them.) Allah's saying:

وَإِن كُلٌّ لَّمَّا جَمِيعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُونَ

(And surely, all -- everyone of them will be brought before Us.) means, all of the past nations and those that are yet to come, will be gathered and brought to account before Allah, may He be glorified and exalted, on the Day of Judgement, and they will be requitted according to their good and evil deeds. This is like the Ayah:

وَإِنَّ كُـلاًّ لَّمَّا لَيُوَفِّيَنَّهُمْ رَبُّكَ أَعْمَالَهُمْ

(And verily, to each of them your Lord will repay their works in full.) (11:111).

Proof of the Creator of the Universe and of Life after Death

Allah, may He be glorified and exalted, says:

وَءَايَةٌ لَّهُمُ

(And a sign for them) means, evidence for them of the existence of the Creator and His perfect power and ability to resurrect the dead,

الاٌّرْضُ الْمَيْتَةُ

(is the dead land.) means, when it is dead and arid, with no vegetation, then Allah sends water upon it, it is stirred (to life), and it swells and puts forth every lovely kind (of growth). Allah says:

أَحْيَيْنَـهَا وَأَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبّاً فَمِنْهُ يَأْكُلُونَ

(We give it life, and We bring forth from it grains, so that they eat thereof.) meaning, `We have made it a provision for them and their cattle.'

وَجَعَلْنَا فِيهَا جَنَّـتٍ مِّن نَّخِيلٍ وَأَعْنَـبٍ وَفَجَّرْنَا فِيهَا مِنَ الْعُيُونِ

(And We have made therein gardens of date palms and grapes, and We have caused springs of water to gush forth therein.) means, `We have created therein rivers which flow to the places where they are needed, so that they may eat of their fruits.' When Allah reminds them of the blessing that He bestows upon His creation by creating crops and plants, He mentions the different types and kinds of fruits. Allah says:

وَمَا عَمِلَتْهُ أَيْدِيهِمْ

(and their hands made it not.) means, all of that could only come about by the mercy of Allah towards them, not by their own efforts and labor and strength. This was the view of Ibn `Abbas and Qatadah. Allah says:

أَفَلاَ يَشْكُرُونَ

(Will they not then give thanks) meaning, will they not then give thanks for the innumerable blessings that He has bestowed upon them. Ibn Jarir, however, understood the word Ma to mean Alladhi (i.e., a relative pronoun). In this case the meaning of the Ayah would be that they eat from the fruits provided by Allah's bounty and from what their own hands have done, i.e., by planting the seeds and tending the plants. Ibn Jarir mentioned other possible interpretations in his Tafsir, but this is the interpretation that he favored. This interpretation also fits with the recitation of Ibn Mas`ud: (لِيَأْكُلُوا مِنْ ثَمَرِهِ وَمِمَّا عَمِلَتْهُ أَيْدِيهِمْ أَفَلَا يَشْكُرُونَ) (So that they may eat of the fruit thereof -- and from what their own hands have done.) Then Allah says:

سُبْحَـنَ الَّذِى خَلَق الاٌّزْوَجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنبِتُ الاٌّرْضُ

(Glory be to Him Who has created all the pairs of that which the earth produces,) meaning, of crops and fruits and plants.

وَمِنْ أَنفُسِهِمْ

(as well as of their own (human) kind, ) means, He made them into male and female.

وَمِمَّا لاَ يَعْلَمُونَ

(and of that which they know not.) means, different kinds of creatures of which they know nothing. This is like the Ayah:

وَمِن كُلِّ شَىْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

(And of everything We have created pairs, that you may remember.) (51:49)

তাফসীর ইবনে কাছীর

৩০-৩২ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দাদের উপর দুঃখ ও আফসোস করছেন যে, কাল। কিয়ামতের দিন তারা কতই না লজ্জিত হবে! তারা সেদিন বারবার বলবেঃ “হায়! আমরা নিজেরাই তো নিজেদের অমঙ্গল ডেকে এনেছি।” কোন কোন কিরআতে (আরবী) রয়েছে। ভাবার্থ এই যে, কিয়ামতের দিন। আযাব দেখে তারা হাত মলবে যে, কেন তারা রসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল এবং কেন আল্লাহর অবাধ্য হয়েছিল? দুনিয়ায় তাদের অবস্থা তো এই ছিল যে, যখনই তাদের কাছে কোন রাসূল এসেছেন তখনই তারা কোন চিন্তা-ভাবনা না করেই তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছে এবং মন খুলে তাঁদের সাথে বেআদবী করেছে ও তাদেরকে অবজ্ঞা করেছে।যদি তারা একটু চিন্তা করতো তবে বুঝতে পারতো যে, তাদের পূর্বে বহু মানব গোষ্ঠীকে আল্লাহ্ ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাদের কেউই রক্ষা পায়নি এবং কেউই তাদের কাছে ফিরে আসেনি। 

এর দ্বারা দারিয়া সম্প্রদায়ের দাবীকে খণ্ডন করা হয়েছে। তারা বলে যে, মানুষ এই দুনিয়া হতে চলে যাবে এবং পরে আবার এই দুনিয়াতেই ফিরে আসবে।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ অবশ্যই তাদের সকলকে একত্রে আমার নিকট উপস্থিত করা হবে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সমস্ত মানুষকে কিয়ামতের দিন হিসাব নিকাশের জন্যে হাযির করা হবে এবং সেখানে প্রত্যেক ভাল মন্দের প্রতিদান দেয়া হবে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদের প্রত্যেককেই তোমার প্রতিপালক তাদের আমলের পূর্ণ প্রতিদান প্রদান করবেন।”(১১:১১১) এক কিরআতে (আরবী) রয়েছে। এ সময় (আরবী) শব্দটি (আরবী) বা হ্যা বাচক হবে। আর (আরবী) পড়ার সময় (আরবী) শব্দটি (আরবী) বা না বাচক হবে এবং (আরবী) শব্দটি (আরবী)-এর অর্থ দেবে। তখন অর্থ হবেঃ কেউ নয় কিন্তু সবাই আমার নিকট হাযিরকত হবে। দ্বিতীয় কিরআতের ভাবার্থ এটাই হবে। এসব। ব্যাপারে মহান আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

৩৩-৩৬ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ আমার অস্তিত্বের উপর, আমার সীমাহীন ক্ষমতার উপর এবং মৃতকে জীবিত করার উপর এটাও একটি নিদর্শন যে, মৃত যমীন, যা শুষ্ক অবস্থায় পড়ে রয়েছে যাতে কোন সজীবতা ও শ্যামলতা নেই, যাতে তৃণ-লতা প্রভৃতি কিছুই জন্মে না, তাতে যখন আকাশ হতে বৃষ্টিপাত হয় তখন তা নবজীবন লাভ করে এবং সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে। চতুর্দিকে ঘাস-পাতা গজিয়ে ওঠে এবং নানা প্রকারের ফল-ফুল দৃষ্টি গোচর হয়। তাই মহান আল্লাহ্ বলেনঃ আমি ঐ মৃত যমীনকে জীবিত করে তুলি এবং তাতে উৎপন্ন করি বিভিন্ন প্রকারের শস্য, যার কিছু কিছু তোমরা নিজেরা খাও এবং কিছু কিছু তোমাদের গৃহপালিত পশু খেয়ে থাকে। ঐ যমীনে আমি তৈরী করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং তাতে প্রবাহিত করি নদ-নদী, যা তোমাদের বাগান ও শস্যক্ষেত্রকে পানিপূর্ণ ও সবুজ-শ্যামল করে থাকে। এটা এই কারণে যে, যাতে দুনিয়াবাসী এর ফলমূল হতে ভক্ষণ করতে পারে, শস্যক্ষেত্র ও উদ্যান হতে উপকার লাভ করতে পারে এবং বিভিন্ন প্রয়োজন পুরো করতে পারে। এগুলো আল্লাহর রহমত ও তার ক্ষমতাবলে পয়দা হচ্ছে, অন্য কারো ক্ষমতাবলে নয়। মানুষের হস্ত এগুলো সৃষ্টি করেনি। মানুষের না আছে এগুলো উৎপন্ন করার শক্তি, না আছে। 

এগুলো রক্ষা করার ক্ষমতা এবং না আছে এগুলো পাকাবার ও তৈরীর করার অধিকার। এটা শুধু আল্লাহ তা'আলারই কাজ এবং তারই মেহেরবানী। আর তাঁর অনুগ্রহের সাথে সাথে এটা তার ক্ষমতার নিদর্শনও বটে। সুতরাং মানুষের কি হয়েছে যে, তারা তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে না? এবং তাঁর অসংখ্য নিয়ামতরাশি তাদের কাছে থাকা সত্ত্বেও তাঁর অনুগ্রহ স্বীকার করছে না? একটি ভাবার্থ এও বর্ণনা করা হয়েছে যে, বাগানের ফল তারা খায় এবং নিজের হাতে বপনকৃত জিনিস তারা পেয়ে থাকে। যেমন হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কিরআতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদের হাত যে কাজ করেছে তা হতে (তারা ভক্ষণ করে থাকে)।পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি উদ্ভিদ, মানুষ এবং তারা যাদেরকে জানে না তাদের প্রত্যেককে সৃষ্টি করেছেন জোড়া জোড়া করে। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ অর্থাৎ “প্রত্যেক জিনিসকে আমি জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছি যাতে তোমরা উপদেশ লাভ কর।”(৫১:৪৯) 

RAMADAN

Ramadan Special -2

কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত

* আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتۡلُونَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ يَرۡجُونَ تِجَٰرَةٗ لَّن تَبُورَ ٢٩ لِيُوَفِّيَهُمۡ أُجُورَهُمۡ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّهُۥ غَفُورٞ شَكُورٞ ٣٠ ﴾ [فاطر: ٢٩، ٣٠]

‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিযিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার, যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা, কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সূরা আল-ফাতির, আয়াত: ২৯-৩০)

আল্লাহর কিতাবের তিলাওয়াত দু’প্রকার। যথা-

১। প্রথম প্রকার: হুকমী তিলাওয়াত। এটা হলো আল্লাহর কথাকে বিশ্বাস করা, তাঁর নির্দেশ মেনে নিয়ে তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে বর্জন করে কিতাব তথা আল কুরআনের সকল হুকুম-আহকাম বাস্তবায়ন করা। এ বিষয়ে অন্য আসরে বিস্তারিত আলোচনা আসবে ইনশাআল্লাহ।

২। দ্বিতীয় প্রকার: শাব্দিক তিলাওয়াত। এটা হলো আল কুরআন পাঠ করা। এর ফযীলতের ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহ হতে অনেক দলীল প্রমাণ রয়েছে। ফযীলত হয়তো পুরা কুরআনের ব্যাপারে আবার হয়তো নির্দিষ্ট কোনো সূরার ব্যাপারে রয়েছে আবার কখনো হয়তো নির্দিষ্ট কোনো আয়াতের ব্যাপারে রয়েছে।

* যেমন বুখারী ও মুসলিমে উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ القُرْآنَ وَعَلَّمَهُ»

“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যিনি কুরআন মাজীদ শিক্ষা করেন এবং অন্যকে শিক্ষা দেন।”[বুখারী: ৫০২৭]

* বুখারী ও মুসলিমে আরো বর্ণিত হয়েছে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِى يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيهِ وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقٌّ لَهُ أَجْرَانِ ».

“আল-কুরআনে দক্ষ ও পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ সম্মানিত পুণ্যবান ফেরেশতাদের সঙ্গে থাকবেন। যে ব্যক্তি কুরআন আটকে আটকে তিলাওয়াত করে এবং তা তার জন্য কষ্টকর হয়, তার জন্য দু’টি প্রতিদান রয়েছে।”[বুখারী: ৪৯৩৭; ]

দুটি প্রতিদানের প্রথমটি হলো: তিলাওয়াতের, দ্বিতীয়টি হলো: পাঠকারীর কষ্টের।

* অনুরূপভাবে বুখারী ও মুসলিমে আবু মূসা আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَثَلُ المُؤْمِنِ الَّذِي يَقْرَأُ القُرْآنَ كَمَثَلِ الأُتْرُجَّةِ، رِيحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا طَيِّبٌ، وَمَثَلُ المُؤْمِنِ الَّذِي لاَ يَقْرَأُ القُرْآنَ كَمَثَلِ التَّمْرَةِ، لاَ رِيحَ لَهَا وَطَعْمُهَا حُلْوٌ، »

“যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে তার দৃষ্টান্ত কমলালেবুর মত, যা সুস্বাদু ও সুঘ্রাণযুক্ত। আর যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে না, তার দৃষ্টান্ত খেজুরের ন্যায় যার কোনো ঘ্রাণ নেই কিন্তু তার স্বাদ মিষ্টি।”[বুখারী: ৫৪২৭ ]

* তাছাড়া আরো এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«تَعَاهَدُوا هَذَا الْقُرْآنَ، فَوَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَهُوَ أَشَدُّ تَفَلُّتًا مِنَ الْإِبِلِ فِي عُقُلِهَا» .

“তোমরা কুরআনের যথাযথ যত্ন নাও, তা হিফাযত ও সংরক্ষণ কর। ওই সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, অবশ্যই উট তার রশি থেকে যেমন দ্রুত পালিয়ে যায় তার চেয়েও আরো তীব্র বেগে এ কুরআন চলে যায়। (অর্থাৎ কুরআনের প্রতি যত্নবান না হলে কুরআন স্মৃতি থেকে দ্রুত চলে যাবে।)”[বুখারী: ৫০৩৩ ]

কুরআনের সুনির্দিষ্ট সূরার ফযীলতের ব্যাপারেও অনেক হাদীস বর্ণিত রয়েছে

আর কুরআনের সুনির্দিষ্ট সূরার ফযীলতের ব্যাপারেও অনেক হাদীস বর্ণিত রয়েছে।

সেসবের মধ্যে সূরা ফাতেহা অন্যতম:

* সহীহ বুখারীতে আবু সাঈদ ইবনুল মু‘আল্লা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন:

«لَأُعَلِّمَنَّكَ سُورَةً هِيَ أَعْظَمُ سُورَةٍ فِي الْقُرْآنِ قَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ هِيَ السَّبْعُ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنُ الْعَظِيمُ الَّذِي أُوتِيتُهُ».

‘অবশ্যই আমি তোমাকে কুরআনের বড় সূরাটি শেখাবো। সেটা হলো সূরা আল-ফাতেহা ‘‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’’ এটাই ‘সাব‘উল মাসানী’ (বা বারবার পঠিত ৭টি আয়াত) এবং মহা কুরআন যা আমাকে দেওয়া হয়েছে।”[বুখারী: ৫০০৬]

* সূরা ফাতিহার এ ফযীলতের কারণেই সালাতের মধ্যে এ সূরা পাঠ করা সালাতের রুকন হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে; যা ছাড়া সালাত শুদ্ধ হয় না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ.

‘সূরা ফাতিহা যে ব্যক্তি পড়ল না তার সালাতই পূর্ণ হবে না।’[বুখারী: ৭৫৬]

* আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত আছে যে,

«أَنَّ من قرأها في ليلة لم يزل عليه من الله حافظ ولا يقربه شيطان حتى يصبح».

“যে ব্যক্তি এ আয়াতুল কুরসী রাত্রি বেলায় পাঠ করল, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য একজন সংরক্ষণকারী সার্বক্ষণিকভাবে থাকবে এবং শয়তান সকাল হওয়া পর্যন্ত তার কাছে আসতে পারবে না।”[বুখারী: ২৩১১]

* সহীহ বুখারীতে আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সূরার ব্যাপারে বলেছেন:

«وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ إنها تَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ».

‘সেই সত্তার কসম করে বলছি যার হাতে আমার জীবন নিহিত, নিশ্চয়ই এ সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।’[বুখারী: ৫০১৩ ]

অবশ্য ফযীলতের ক্ষেত্রে এটা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান এ কথাটির অর্থ এই নয় যে তা পুরো কুরআনের বিকল্প। এজন্য যদি কেউ এ সূরা সালাতে তিনবার পড়ে তা তার জন্য সূরা ফাতেহার বিকল্প হিসেবে গ্রহণীয় হবে না। বস্তুত কোনো কিছু ফযীলতের ক্ষেত্রে অন্য কিছুর সমপর্যায়ের হলেই এটা আবশ্যক নয় যে তা অপরটার বিকল্প হবে। যেমন সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, আবূ আইয়ুব আল আনছারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

من قال لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ عَشَرَ مَرَّات كَانَ كَمَنْ أعتق أربعة أنفسٍ من ولد إسماعيل.

“যে ব্যক্তি বলল,

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ.

‘একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, সকল রাজত্ব তাঁর, তাঁর জন্য সকল প্রশংসা।’ এ দো‘আ বা যিকরটি ১০ বার পড়ে, সে যেন ইসমাইল ‘আলাইহিস সালামের সন্তানদের মধ্যে চারজন গোলামকে আযাদ করে দিল।”[বুখারী: ৬৪০৪; ]

জিব্রাঈল (আলাইহিস সালাম) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের কাছে প্রত্যেক বছর রমযান মাসে একবার পুরো কুরআন পেশ করতেন, পুনরাবৃত্তি করতেন। অবশেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর বছর তিনি সেটা দু’বার পেশ করেন; যাতে তা রাসূলের হৃদয়ে স্থায়ী ও স্থির হয়ে যায় এবং পাশাপাশি বিষয়টি জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এমনটি করেছেন।[বুখারী: ৪৯৯৮ ]

সিয়ামের বিধানের দিক থেকে মানুষের প্রকারভেদ

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, তিনি নিজ প্রজ্ঞা অনুযায়ী যা সৃষ্টি ও নির্মাণ করেছেন তা করেছেন সুনিপুণ। পথ ও পদ্ধতি হিসেবে প্রবর্তন করেছেন শরীয়তকে, যাতে রয়েছে দয়া ও প্রজ্ঞার সমন্বয়। আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আনুগত্য করার, তাঁর নিজের প্রয়োজনে নয় বরং আমাদেরই প্রয়োজনে। ক্ষমা করেন তাকে যে তার রবের কাছে ফিরে আসে এবং তাঁর কাছে যায় আর বিপুল পরিমান দান করেন তাকে যে সৎকর্মশীল হয়।

﴿وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ ﴾ [العنكبوت: ٦٩]

“আর যারা আমাদের পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, আমরা তাদেরকে অবশ্যই আমাদের পথে পরিচালিত করব।’ (সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৬৯) আমি তাঁর নে‘আমতসমূহের ওপর তাঁর স্তুতি গাই ও প্রশংসা করি।

আর আমি সাক্ষ্য প্রদান করি যে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, এমন সাক্ষ্য যা দ্বারা আমি দারুন নাঈম তথা নে‘আমত ও আনন্দপূর্ণ বাড়ী জান্নাত লাভ ধন্য হতে পারি। আমি আরও সাক্ষ্য দেই যে মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, যাকে তিনি সব আসমান ছাড়িয়ে উপরে নিজের কাছে নিয়েছিলেন ফলে তিনি তাঁর নৈকট্য লাভ করেছিলেন।

আল্লাহ সালাত পেশ করুন তাঁর ওপর, তাঁর সাথী আবূ বকরের ওপর যিনি ইবাদতের কষ্টের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছেন সন্তুষ্টচিত্তে, যাকে আল্লাহ তার বাণী,

﴿إِذۡ يَقُولُ لِصَٰحِبِهِۦ لَا تَحۡزَنۡ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَنَاۖ﴾ [التوبة: ٤٠]

“যখন তিনি তার সাথীকে বলছিলেন, পেরেশান হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন”। [সূরা আত-তাওবাহ: ৪০] দ্বারা সম্মানিত করেছেন। অনুরূপভাবে উমরের ওপর, যিনি ইসলামের বিজয়গৌরব ছিনিয়ে এনেছেন ফলে তা আর দুর্বল অসহায় থাকেনি, উসমানের ওপর যিনি তাকদীরে সন্তুষ্ট থেকেছেন অথচ তার দুয়ারে মৃত্যু হাতছানি দিয়েছে। তদ্রূপ আলীর ওপর, যিনি বংশগত দিক থেকে রাসূলের নিকটজন এবং যিনি লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। তাছাড়া রাসূলের সকল পরিবার-পরিজন এবং বিশ্বস্ত ও সম্মানিত সাহাবীর ওপর। আর আল্লাহ তাদের উপর যথাযথ সালামও বর্ষণ করুন।

 সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে মানুষের দশটি প্রকার

কিন্তু এ সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে মানুষের দশটি প্রকার রয়েছে:

প্রথম প্রকার: ঐ সব মানুষ যারা মুসলিম, বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন, মুকীম, সামর্থ্যবান ও বাধামুক্ত।

এ প্রকার মানুষদের উপর রমযানের সাওম যথাসময়ে আদায় করা ওয়াজিব। কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার দলীলসমূহ এর উপর প্রমাণবহ।

* আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ ﴾ [البقرة: ١٨٥]

‘রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

* রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«إِذَا رَأَيْتُمُ الْهِلَالَ فَصُومُوا »

‘যখন তোমরা রমযানের চাঁদ দেখবে, তখন সিয়াম পালন করবে।’[বুখারী: ১৯০৫ ]

* আর পৃথিবীর সব মুসলিম রমযানের সিয়াম ফরয হওয়ার ব্যাপারে ইজমা বা ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

কাফিরের ওপর সিয়াম ফরয নয় এবং কাফিরের সিয়াম বিশুদ্ধও হবে না। কারণ সে ইবাদত করার যোগ্য নয়। তাই যদি সে মাহে রমযানের মাঝখানে মুসলিম হয়, তাহলে বিগত দিনগুলোর সিয়াম কাযা করা তার উপর আবশ্যক নয়।

* কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِن يَنتَهُواْ يُغۡفَرۡ لَهُم مَّا قَدۡ سَلَفَ﴾ [الانفال: ٣٨]

‘যারা কুফরী করেছে তুমি তাদেরকে বল, যদি তারা বিরত হয় তাহলে অতীতে যা হয়েছে তাদেরকে তা ক্ষমা করা হবে।’ (সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩৮)

দ্বিতীয় প্রকার: নাবালেগ শিশু।

সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম তাদের ছোট ছোট নাবালেগ সন্তানদের রোযা রাখাতেন এবং মসজিদে নিয়ে যেতেন এবং তাদের জন্য তুলা, পশম ইত্যাদির খেলনা বানিয়ে দিতেন। খাবার না পেয়ে কাঁদলে তারা ওই ছোট সন্তানদের খেলনা দিতেন, ওরা খেলনা পেয়ে খেলত এবং খাবারের কথা ভুলে যেত[বুখারী: ১৯৬০ ]।

অথচ বাস্তবতা হলো, ইসলামের মৌলিক নিদর্শনাবলী ও তার মূল্যবান শিক্ষার ওপর প্রশিক্ষণ দেয়াই সন্তানের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসার দাবী। সুতরাং যে অভিভাবক নাবালেগ শিশুসন্তানদের সিয়াম পালন থেকে নিষেধ করেন অথবা এ ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করেন, তিনি তাদের জন্য যালেম হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং নিজের উপরও। হ্যাঁ! যদি তারা সাওম পালন শুরু করে দেওয়ার পর তিনি দেখতে পান যে সিয়াম পালনে তাদের ক্ষতি হয়ে যাবে তখন তাদেরকে তা থেকে নিষেধ করায় কোনো অসুবিধা নেই।

তৃতীয় প্রকার: পাগল তথা সুস্থজ্ঞানশূন্য ব্যক্তি

পাগল যদি সিয়াম পালন করে তাহলে তা সহীহ হবে না। কারণ পাগলের কাছে এমন বিবেক নেই যা দ্বারা সে ইবাদত বুঝবে ও তার নিয়ত বুঝবে। আর নিয়ত ছাড়া ইবাদত বিশুদ্ধ হয় না। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى»

‘সকল আমল বা কাজে ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক মানুষের জন্য তা-ই রয়েছে যা সে নিয়ত করল।’[বুখারী: ৬৬৮৯ ]

চতুর্থ প্রকার: স্মৃতি হারানো ও ভালো-মন্দের তারতম্য বোধশূন্য বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি।

এ ধরণের ব্যক্তিদের ‌ওপর সিয়াম পালন কিংবা মিসকীন খাওয়ানো কোনোটাই আবশ্যক নয়। কারণ ভালো-মন্দ নির্ণয় করার জ্ঞান না থাকার কারণে তিনি শরয়ী মুকাল্লাফ (বাধ্য-বাধকতা) অবস্থায় থাকেন না। এ ধরনের লোককে ভালো-মন্দ পার্থক্য করতে পারে না এমন শিশু হিসেবে গণ্য করা হবে।

যদি তাঁর কখনো পার্থক্য করার জ্ঞান থাকে আবার কখনো পার্থক্য করার জ্ঞান থাকে না এমন অবস্থা হয়, তাহলে পার্থক্য করার জ্ঞান থাকা অবস্থায় সাওম ফরয হবে। জ্ঞানশূন্য অবস্থায় ফরয হবে না। আর সালাত সিয়ামের মতোই। জ্ঞানহীন অবস্থায় সালাত পড়া আবশ্যক নয়, জ্ঞান থাকা অবস্থায় সালাত পড়া অবশ্যক।

পঞ্চম প্রকার: সাওম পালনে এমন ধারাবাহিক অক্ষম ব্যক্তি যার অক্ষমতা দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই:

যেমন অতিশয় বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি বা এমন রোগী যার রোগ আরোগ্য হওয়া আশা করা যায় না। এর উদাহরণ হচ্ছে, ক্যানসার বা অনুরূপ রোগ। অতএব এমন ব্যক্তির জন্য সিয়াম পালন ফরয নয়। কারণ সে এতে অক্ষম।

* আর আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :

﴿ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ ﴾ [التغابن: ١٦]

‘যতটুকু পার তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬)

* আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন:

﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ﴾ [البقرة: ٢٨٦]

‘আল্লাহ সাধ্যের বাইরে কাউকে দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।’ (সূরা আল-বাকারাহ্‌, আয়াত: ২৮৬)

তবে ওই অক্ষম ব্যক্তির জন্য প্রতি সাওমের বদলে রোজ একজন মিসকীনকে খাওয়ানো আবশ্যক। কারণ আল্লাহ তা‘আলা সাওম ফরয হবার প্রাথমিক সময়ে খাবার খাওয়ানোকে সাওম পালনের সমান বলে গণ্য করেছিলেন, যখন এতদোভয়ের যে কোনো একটি করার অনুমতি ছিল। সুতরাং সাওম পালনে অক্ষম ব্যক্তির জন্য প্রত্যেক সাওমের বদল হিসেবে খাবার খাওয়ানো সুনির্ধারিত হয়ে গেল; কারণ খাবার খাওয়ানো সাওম পালনের বিকল্প।

আর খাবার খাওয়ানোর ব্যাপারে দু’টির যে কোনোটি গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে,

প্রত্যেক মিসকীনকে আলাদাভাবে খাদ্য ভাগ করে দেয়া যায়। প্রত্যেকের জন্য এক মুদ্দ উন্নত গম, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সা‘ এর চারভাগের একভাগ। আর এক মুদ্দ এর পরিমান হচ্ছে, “আধা কিলো ও ১০ গ্রাম” ভারী ভালো গম।
আবার খাবারের আয়োজন চূড়ান্ত করে সব মিসকীনকে দাওয়াত দিয়ে নির্ধারিত দিনের হিসেব অনুযায়ী খাওয়ানো যেতে পারে।

ইমাম বুখারী বলেন:

وَأَمَّا الشَّيْخُ الْكَبِيرُ إِذَا لَمْ يُطِقْ الصِّيَامَ فَقَدْ أَطْعَمَ أَنَسٌ بَعْدَ مَا كَبِرَ عَامًا أَوْ عَامَيْنِ كُلَّ يَوْمٍ مِسْكِينًا خُبْزًا وَلَحْمًا وَأَفْطَرَ

‘বয়স্ক বৃদ্ধ লোক যখন সিয়াম পালনে অক্ষম হবেন, তখন তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর পদাংক অনুসরণ করবেন। আনাস বয়স্ক হবার পর এক বছর কিংবা দু’বছর প্রত্যেক দিন একজন মিসকীনকে রুটি ও মাংস খাওয়াতেন এবং সাওম ভাঙ্গতেন।[বুখারী (ব্যাখাগ্রন্থ ফাতহুল বারীসহ) : ৮/১৭৯ ]’

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বৃদ্ধ পুরুষ, বৃদ্ধা নারীর ব্যাপারে বলেছেন, তারা যদি সাওম পালনে অক্ষম হন, তাহলে প্রতি সাওমের স্থলে একজন মিসকীনকে খাওয়াবে।’[বুখারী: ৪৫০৫ ]

ষষ্ঠ প্রকার: মুসাফির ব্যক্তি যিনি সাওম ভাঙ্গার কৌশল হিসেবে সফরের সংকল্প করেন নি।

যদি মুসাফির সাওম ভাঙ্গার কৌশল হিসেবে সংকল্প সফর শুরু করে তাহলে সাওম ভাঙ্গা তার জন্য হারাম হবে। তখন সাওম পালনই তার জন্য ফরয হয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে সে যদি সফরকে কৌশল হিসেবে গ্রহণ না করে তবে সে সাওম পালন বা সাওম ভঙ্গ করার এখতিয়ার পাবে। তার সফরের সময়সীমা দীর্ঘ হোক কিংবা সংক্ষিপ্ত। হোক তার সফর কোনো উদ্দেশ্যে আকস্মিক কিংবা ধারাবাহিক। যেমন পাইলট বা ভাড়া গাড়ির ড্রাইভার। কারণ,

* আল্লাহর বাণীতে সফরের কথা ব্যাপকার্থেই এসেছে:

﴿وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ ﴾ [البقرة: ١٨٥]

‘আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ বা মুসাফির, সে তার সিয়াম অন্য সময় আদায় করে নেবে। তোমাদের পক্ষে যা সহজ আল্লাহ তাই চান এবং তোমাদের জন্য যা কষ্টকর তা তিনি চান না।’ (সূরা আল-বাকারাহ্‌, আয়াত: ১৮৫)

* বুখারী ও মুসলিমে আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«كُنَّا نُسَافِرُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ يَعِبِ الصَّائِمُ عَلَى المُفْطِرِ، وَلاَ المُفْطِرُ عَلَى الصَّائِمِ»

“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সফর করতাম, তখন সিয়াম পালনকারী ভঙ্গকারীকে দোষ দিত না এবং সিয়াম ভঙ্গকারীও পালনকারীকে দোষারোপ করত না।’[বুখারী: ১৯৪৭ ]

* সহীহ বুখারী ও মুসলিমে জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে আরও বর্ণিত হয়েছে:

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَرَأَى زِحَامًا وَرَجُلًا قَدْ ظُلِّلَ عَلَيْهِ فَقَالَ مَا هَذَا فَقَالُوا صَائِمٌ فَقَالَ لَيْسَ مِنْ الْبِرِّ الصَّوْمُ فِي السَّفَرِ»

‘নবী সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন, তিনি একস্থানে মানুষের জটলা দেখলেন, সেখানে তারা এক লোককে ছায়া দিচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী হচ্ছে এখানে? তারা বললো, সাওম পালনকারী। উত্তরে তিনি বললেন, সফর অবস্থায় সাওম পালনে কোনো পুণ্য নেই।’[বুখারী: ১৯৪৬ ]

সপ্তম প্রকার: এমন রোগী যার রোগমুক্তির আশা করা যায়।

এর তিনটি অবস্থা:

প্রথমত: যদি এমন হয় যে, সাওম তার জন্য কষ্টকর নয় আবার তার ক্ষতিও করবে না, তাহলে তার জন্য সাওম ফরয হবে। কারণ তার কোনো শর‘ঈ ওযর নেই যা সাওম ভাঙ্গাকে বৈধ করবে।

দ্বিতীয়ত: যদি এমন হয় যে, সাওম তার জন্য কষ্টকর, তবে তার ক্ষতি করবে না। এমতাবস্থায় সে সাওম ভঙ্গ করবে।

* যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ ﴾ [البقرة: ١٨٥]

‘যে ব্যক্তি অসুস্থ কিংবা সফর অবস্থায় থাকবে যে অন্যসময় গণনা করে সাওম পূর্ণ করে নেবে।’ (সূরা আল-বাকারাহ্‌, আয়াত: ১৮৫)

এমতাবস্থায় তার জন্য কষ্টকর হলে সাওম পালন মাকরূহ হবে। কারণ সে আল্লাহর দেওয়া সুযোগ থেকে বের হয়ে নিজেকে শাস্তি দিল।

তৃতীয়ত: যদি এমন হয় যে, সাওম তার ক্ষতি করবে। তাহলে তার জন্য সাওম ভাঙ্গা ওয়াজিব এবং সাওম পালন বৈধ নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ٢٩ ﴾ [النساء: ٢٩]

‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান।’ [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

﴿ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ ﴾ [البقرة: ١٩٥]

‘তোমরা তোমাদের নিজেদের হাতকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৯৫)

* অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« إِنَّ لِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا »

‘নিশ্চয় তোমার নিজের ওপর নিজের কিছু হক রয়েছে।’[বুখারী: ১৯৬৮ ]

YOUTH

FIQH - Islamic Law 

Ghusl - 2